সুরা আল-লাহাব মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৫টি। এ সূরায় আবু লাহাবের চরিত্র ও পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা লাহাব। এটি আল-কুরআনের ১১১তম সূরা।
শানে নুযুল
একদা রাসুলুল্লাহ (স.) সাফা পর্বতে আরোহণ করে কুরাইশদের ডাক দিলেন। তৎকালীন সময়ে আরবে বিপদাপদের ক্ষেত্রে এভাবে আহ্বান করার প্রচলন ছিল। তাই রাসুল (স.)-এর ডাকে সকলেই পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলো। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমি যদি বলি যে এ পাহাড়ের অপর পাশে একটি শত্রুদল তোমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। যেকোনো সময় তারা তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাহলে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে? সকলেই সমস্বরে বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করব। এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমি তোমাদের এক ভীষণ শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করছি। (তোমরা স্বীকার কর যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং মূর্তিপূজা পরিত্যাগ কর।) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর এ দাওয়াত শুনে আবু লাহাব বলে উঠল-
تَبَّا لَكَ آلِهَذَا جَمَعْتَنَا
অর্থ: 'তোমার ধ্বংস হোক। এজন্যই কি তুমি আমাদের একত্রিত করেছ?'
অতঃপর আবু লাহাব রাসুল (স.)-কে পাথর মারতে উদ্যত হয়। আবু লাহাবের এ কথা ও কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করেন। (সহিহ বুখারি)
শব্দার্থ
تبت - ধ্বংস হোক, বিনষ্ট হোক।
يدا - দুইহাত
يد - হাত
مَا اغْنى - কোনো কাজে আসেনি, কোনো উপকার আসেনি, রক্ষা করেনি
کسب - সে উপার্জন করেছে
ذَاتَ لَهَبٍ - লেলিহান, শিখাযুক্ত
امْرَأَتُهُ - তার স্ত্রী
حمالة - বহনকারিণী
اَلْحَطَبِ - কাঠ, লাকড়ি, ইন্ধন
جيد - গলা
سيصلى - সে অচিরেই প্রবেশ করবে
حَبْل - রশি, ফাঁস, রজ্জু
অনুবাদ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ
১. আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।
مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ
২. তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে তা কোনো কাজে আসেনি।
سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
৩. শীঘ্রই সে লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে।
وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ
৪. এবং তার স্ত্রীও (প্রবেশ করবে) যে ইন্ধন বহন করে।
فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ تَمْسَدٍ :
৫. তার গলায় পাকানো রশি।
ব্যাখ্যা
আবু লাহাব ছিল ইসলাম ও নবি করিম (স.)-এর শত্রু। সে সর্বদাই ইসলামের শত্রুতায় লিপ্ত ছিল। এ সূরায় তার শোচনীয় পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আবু লাহাব ছিল রাসুল (স.)-এর চাচা। মক্কা নগরীতে সে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিল। সে প্রচুর ধন-সম্পদেরও মালিক ছিল। কিন্তু এত কিছুও তার কোনো কাজে আসেনি। বরং দুনিয়াতেও আবু লাহাবের ধ্বংস। আর আখিরাতেও সে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। তার সত্রীও ছিল তারই মতো ইসলামের শত্রু। সেও রাসুল (স.)-কে কষ্ট দিত। সে রাসুল (স.)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। ফলে তার প্রতিও আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ রয়েছে এবং আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
শিক্ষা
বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থী সূরা আল-লাহাবের শিক্ষাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। |